Wednesday, November 22, 2017

যেভাবে ঘুমালে মৃত সন্তানের ঝুঁকি-



যাঁরা মা হতে যাচ্ছেন, শেষ তিন মাস কীভাবে বা কোন ভঙ্গিতে ঘুমাচ্ছেন, তা নিয়ে অন্তত দুবার ভাবুন। কারণ, গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে যেসব নারী বিছানায় পিঠ দিয়ে চিত হয়ে ঘুমান, তাঁদের ক্ষেত্রে মৃত সন্তানের জন্ম দেওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

দ্য ইনডিপেনডেন্ট অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ১ হাজার ২৪ জন নারীর ওপর এই গবেষণা করেছেন। গত সোমবার ব্রিটিশ জার্নাল অব অবসটেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকলজিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকেরা মৃত সন্তানের জন্ম দেওয়া ২৯১ জন নারী এবং সুস্থ ও জীবিত সন্তানের জন্ম দেওয়া ৭৩৩ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেন। পরে গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস তাঁদের ঘুমানোর ভঙ্গিমা পর্যালোচনা করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব নারী গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস চিত হয়ে ঘুমান, তাঁদের মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি দ্বিগুণেরও বেশি। কারণ, ঘুমানোর ভঙ্গিমা ভ্রূণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এ জন্য সন্তানসম্ভবা নারীদের একপাশে কাত হয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চিত বা উপুড় হয়ে ঘুমালে মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি বাড়ার কারণ সম্পর্কে গবেষকেরা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে তাঁদের ধারণা, গর্ভবতী নারী যখন চিত বা উপুড় হয়ে ঘুমান, তখন গর্ভাশয়ের ওজন বেড়ে যায়, যা রক্তনালির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এতে গর্ভের শিশুর শরীরে রক্ত ও অক্সিজেনের প্রবাহ ব্যাহত হয়। আরেকটি অনুসিদ্ধান্তে গবেষকেরা বলেছেন, গর্ভবতী নারী চিত বা উপুড় হয়ে ঘুমালে গর্ভের শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে প্রতি এক হাজার গর্ভবতী নারীর মধ্যে তিনজন ২৮ সপ্তাহের পরে মৃত সন্তান প্রসব করেন। অন্য দেশগুলোয় এই হার আরও বেশি। প্রতি এক হাজার নারীর মধ্যে ৮ দশমিক ৮ জন মৃত সন্তান প্রসব করেন।
গবেষকেরা বলছেন, রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর সন্তানসম্ভবা নারী নিজেকে চিত হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পেলে এ নিয়ে ঘাবড়ে যাওয়া উচিত নয়। বরং কাত হয়ে শুয়ে পড়লেই হবে। অন্তঃসত্ত্বা নারী চিত না হয়ে পাশ ফিরে ঘুমালে যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ নবজাতকের জীবন রক্ষা করা যেত।
শুধু যে ঘুমানোর ভঙ্গির ওপর মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যায়, তা কিন্তু নয়। এর সঙ্গে আরও অনেক বিষয় জড়িত। সন্তানসম্ভবা কোনো নারী যদি রাতে বারবার শৌচাগারে যান ও প্রতিদিনই দিনের বেলা ঘুমান, তাহলেও এই ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
রয়্যাল কলেজ অব অবসটেট্রিশিয়ান অ্যান্ড গাইনোকলজিস্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড মরিস বলেন, গবেষণাটির জন্য গবেষকদের অভিনন্দন জানাতে হয়। মৃত সন্তান প্রসবের মতো জটিল বিষয়ের অনেক অজানা দিক এখন স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
রয়্যাল কলেজ অব মিডওয়াইভসের ধাত্রীবিদ্যা বিভাগের পরিচালক লুইস সিলভার্টন বলেন, ‘মৃত সন্তান প্রসব করা একজন মা ও পরিবারের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। মৃত সন্তান প্রসবের হার আরও কমিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’
গবেষক দলের প্রধান ম্যানচেস্টারে সেন্ট মেরি’স হাসপাতালের টমি’স স্টিলবার্থ রিসার্চ সেন্টারের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর আলেক্সান্ডার হেজেল বলেন, সন্তানসম্ভবা নারীদের পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু ঘুম ভাঙার পর নিজেকে চিত হয়ে থাকা অবস্থায় দেখলে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটেনে সন্তানসম্ভবা নারীদের ঘুমানোর ভঙ্গি বদলের উৎসাহ দিতে ও এই গবেষণা প্রতিবেদন জানাতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে প্রচারণা শুরু করেছে টমি’স স্টিলবার্থ রিসার্চ সেন্টার।

একপাশে কাত হয়ে ঘুমানোর জন্য সন্তানসম্ভবা মায়েদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে টমি’স স্টিলবার্থ রিসার্চ সেন্টার। সেগুলো হলো:
ঘুমাতে যাওয়ার সময় কাত হয়ে শুয়ে পিঠের দিকে কয়েকটি বালিশ রেখে দিন। এতে কাত হওয়া থেকে হঠাৎ করে চিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
রাতে কোনো কারণে ঘুম ভেঙে গেলে, ঘুমানোর ভঙ্গিটি দেখে নিন। এরপর আবারও পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
দিনে অল্প সময়ের জন্য ঘুমাতে গেলেও রাতের মতো ঘুমানোর ভঙ্গির প্রতি গুরুত্ব দিন। পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

No comments:

Post a Comment