আমরা আজকাল ভাত বা শর্করা জাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড,মিষ্টি খাবার বেশি বেশি খাই| শাক, সবজি, ফলমূলের দিকে অনেকেই তাকাই না বা ঠিক মত খাই না| অনেকেই দৈনিক তো দুরের কথা, সপ্তাহে একদিনও ফল বা সবজি খাই না| আমাদের অনেকেরই খাদ্যাভাস হচ্ছে–বেশি বেশি শর্করা আর মাংশ খাওয়া| কিন্তু এটি হলো চরম অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস| পুষ্টিবিদেরা বলেন: “ভাতের সাথে সবজি নয়, সবজির সাথে ভাত খেতে হবে”| উনারা আরো বলেন যে: প্রতি বেলা খাবারে ফল বা সবজি খেতেই হবে|
তাই এই পোস্টে সবজি ও ফল প্রতিদিন কতটুকু ও কিভাবে খাবেন তা দিচ্ছি|
সবজি ও ফল প্রতিদিন কতবার খাবেন?
অনেকে মনে করেন সবজি বা ফল আবার মেপে খাবার কি আছে? কম ক্যালরি তাই একবারে বেশি পরিমানে খেতে ক্ষতি নেই| কিন্তু সব খাবারই পরিমানমত অল্প অল্প করে খেলে শরীরের সঠিক পুষ্টির চাহিদা মিটবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে, শরীর রোগ থেকে মুক্ত থাকবে|
আমাদের প্রতিদিন ৫-৯ পরিবেশন সবজি ও ফল খেতে হবে| এবং প্রতিটি খাবার খেতে হবে portion size control করে|
নিচে বয়স, শারীরিক পরিশ্রম ও লিঙ্গ ভেদে দৈনিক ফল ও সবজি খাবার পরিমান দেয়া হলো–
- ২-৬ বছরের শিশু, কম পরিশ্রমী মহিলা ও বৃদ্ধরা ২ পরিবেশন ফল, ৩ পরিবেশন সবজি খাবেন
- বাড়ন্ত বয়সের মেয়েরা, পরিশ্রমী মহিলা, অধিকাংশ পুরুষ ৩ পরিবেশন ফল, ৪ পরিবেশন সবজি খাবেন
- বাড়ন্ত বয়সের ছেলেরা, পরিশ্রমী পুরুষ ৪ পরিবেশন ফল , ৫ পরিবেশন সবজি খাবেন
The United States Department of Agriculture (USDA) এক পরিবেশন সবজি ও ফল খাবার যে নিয়ম দিয়েছে, তা হলো —
- সবজি ও ফল(রান্না করা বা কাঁচা ) এক পরিবেশন = ১/২ কাপ
- সবুজ পাতা জাতীয়, যেমন– শাক, লেটুস ইত্যাদি এক পরিবেশন =এক কাপ
- শুকনা ফল, যেমন: খেজুর, খোরমা, কিশমিশ, Apricot ইত্যাদি =১/৪ কাপ
- ফলের বা সবজির জুস =৩/৪ কাপ
USDA এর হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন কত কাপ সবজি খাবেন তা জানতে ক্লিক করুন|
USDA এর হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন কত কাপ ফল খাবেন তা জানতে ক্লিক করুন|
সবজি ও ফল খাবার উপকারিতা হলো–
- এতে কম ক্যালরি থাকে, অনেক ফাইবার, ভিটামিন, পানি ও মিনারেলস থাকে| ফলে আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে|
- এতে খুব অল্প ফ্যাট, ও ক্যালরি থাকে| কোনো cholesterol থাকে না
- উপরের সুবিধাগুলো পাবার ফলে আপনার হার্টের অসুখ, cholesterol, diabetes, ক্যান্সার, বা ওজন সম্পর্কিত কোনো সমস্যা হবার সম্ভাবনা কমে যায়
- নানান রকমের সবজি ও ফল খেতেও সুস্বাদু
- এগুলোর ভিটামিনের অভাবে নানান রকম রোগ হতে পারে
- সবজি ও ফল নিয়মিত খাবার কারণে তাড়াতাড়ি বিভিন্ন রকম অসুখ সারাতে সাহায্য করে
- এগুলোতে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেলস, potassium, folate ও dietary fiber থাকার কারণে হজম শক্তি বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে
- বিভিন্ন ভাবে ফল ও সবজি খেতে পারেন– রান্না করে, সালাদের সাথে, সিদ্ধ করে, গ্রিল করে, স্টীম করে, বা কাঁচা|
- চেষ্টা করুন বিভন্ন রকমের সবজি ও ফল খেতে| বিভিন্ন রঙের বা ৫ রঙের সবজি বা ফল খেতে হবে প্রতিদিন| তাহলে শরীর সঠিক মাত্রার পুষ্টি পাবে| যেমন– বিভন্ন রকমের ভিটামিন, শর্করা, মিনারেলস, ফাইবার ইত্যাদি|
- প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বিভিন্ন রকমের বা রঙের সবজি ও ফল রাখতে, চেষ্টা করুন– লাল, সবুজ, হলুদ, সাদা, কমলা, বেগুনি ইত্যাদি রঙের ফল ও সবজি খেতে|
- সবজিতে ও ফলে ভিটামিন, মিনারেলস মোটামুটি একই রকম থাকে| পার্থক্য হলো সবজিতে চিনির পরিমান ফলের চাইতে কম থাকে|
- তাই যাদের ডায়বেটিস আছে, যাদের ওজনের সমস্যা আছে, তাদের বেশি মিষ্টি ফল পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের পরামর্শমত একটু বেছে ও পরিমান মত খেতে হবে|
- কোনো শারীরিক সমস্যা, যেমন– গ্যাসের সমস্যা থাকলে ডাক্তারের নির্দেশ মত সবজি বা ফল খেতে হবে|
- প্রতিবেলা খাবারে সবজি খাওয়া বাড়াতে বেশি বেশি সালাদ খেতে পারেন| চেষ্টা করুন অন্তত: দুপুর ও রাতের খাবারের সাথে প্রচুর সালাদ খেতে
- স্ন্যাকস হিসাবে চিপস, তেলে ভাজা খাবার, যেমন– সিংগারা, পেয়াজু, ফাস্ট ফুড না খেয়ে সবজি ও ফল খান| কারণ ক্যালরি কম থাকার কারণে সবজি ও ফল খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, প্রচুর ফাইবার থাকার কারণে পেট ভরা বোধ হয়| তাই অনেকক্ষণ ক্ষুধা লাগে না|
- আপনার খাবারের প্লেটের অর্ধেক পরিমান থাকবে সবজি বা ফল| বাকি ১/৪ ভাগ শর্করা, বাকি ১/৪ ভাগ আমিষ|নিচের ছবি দেখুন |
- সকালের নাস্তায় ফলের জুস খেলে ভালো | তবে জুস তাজা ফলের বা ১০০% ফলের জুস হলে ভালো এবং চিনি ছাড়া খাওয়াই ভালো| কাঁচা ফল খাওয়া জুস খাওয়ার চাইতে আরো ভালো|
ফল খাবার নিয়ম জানতে ক্লিক করুন|
No comments:
Post a Comment