Friday, March 27, 2015

Stir Fried Spinach With Mashroom স্টার ফ্রাইড পালংশাক ও মাশরুম


স্টার ফ্রাইড পালংশাক ও মাশরুম
প্রিয় পাঠক, সালাম ও শুভেচ্ছা| কেমন আছেন সবাই?  আজকে কি কি হেলদি খাবার খেয়েছেন? বা কি হেলদি খাবার খাওয়ার কথা চিন্তা করছেন? নতুন কোনো রেসিপি চেষ্টা করার কথা  ভাবছেন? হেলদি উপায়ে জীবন যাপন করার জন্যে ও ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিন্তু আপনাকে অবশ্যই হেলদি উপায়ে খাবার রাঁধতে হবে|মানে, বেশি তেল ও মশলা যুক্ত খাবার, ভাজা বা ভুনা খাবার, অধিক ক্যালরি ও ফ্যাট যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে|
আমি কিন্তু সব সময় বিভিন্ন জায়গায় খুজি আর কি নতুন হেলদি রেসিপি চেষ্টা করা যায়|
তাই আপনাদের জন্য আমার রেসিপির ভান্ডার থেকে একটি রেসিপি শেয়ার করছি| আমি নিশ্চিত এটি আপানাদের ভালো লাগবে| কারণ, গতানুগতিক রান্না খেয়ে আমাদের রুচি অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়| তাই এই পালংশাকের একটু অন্যরকম রেসিপি আপনাদের জন্য দিচ্ছি|
তার আগে একটু পালংশাকের গুনাগুন বলে নেই|
পালংশাকে যে যে পুষ্টি উপাদান গুলো আছে :
পালংশাক কম  ক্যালরি ও অধিক ভিটামিনযুক্ত একটি গাঢ়সবুজ শাক|
পুষ্টিবিদেরা সবসময় বলেন যে, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অবশ্যই একবেলা হলেও গাঢ়সবুজ শাক বা পাতা জাতীয় খাবার থাকতেই হবে| কারণ, এই ধরনের দরকারী শাকে থাকে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি, antioxidants এবং anti-cancer উপাদান|
পালংশাক এই ধরনের দরকারী গাঢ়সবুজ শাক, যাতে আছে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল| পালং শাকের ভিটামিনে আছে folate, niacin, vitamin A, B6, C, Niacin, Thiamin, Riboflavin, , bioflavonoids, vitamin K, E (Alpha Tocopherol)| এতে মিনারেলস আছে–potassium, manganese, zinc, copper,  magnesium, iron, calcium, phosphorus, , sodium, ও iodine.
এতে অধিক মাত্রায় omega-3 fatty acidsও আছে, যা হার্ট, ত্বক, ব্রেইন ইত্যাদির জন্য খুবই ভালো| এতে আমিষও আছে| আর আছে অনেক দরকারী amino acids|
এছাড়াও এর রোগ প্রতিরোধী antioxidant ও phytochemicals এর তালিকায় আছে – carotenoids/ beta-carotene, lutein, lipoic acid,  xanthenes |
কাঁচা পালংশাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও ক্লোরফিল থাকে, যা শক্তিশালী antioxidant ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে|
এতে ফ্যাট/ স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও Cholesterol নেই, আর আছে প্রচুর ফাইবার|
পালংশাক আমাদের শরীরের জন্য কেন ভালো?

  • এটি চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়, চোখের নানা রকম রোগ সারাতে সাহায্য করে|
  • ব্লাড প্রেসার কমায়/ নিয়ন্ত্রণে রাখে, শরীরের রক্ত চলাচল ঠিক রাখে, হাইপার টেনশন কমায় , ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে ও প্রতিরোধ করে
  • মাসেলের শক্তি বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে হার্টের মাসেলের, এতে হার্টের বিভিন্ন অসুখ হতে রক্ষা পাওয়া যায়
  • এর antioxidant এর কারণে চোখের ছানি পড়ে না ও বয়সের কারণে দৃষ্টি শক্তি কমা হতে রক্ষা করে
  • এর আমিষ–ফ্যাট ও Cholesterol দূর করে, ফলে হার্ট এটাকের, স্ট্রোকের ঝুকি কম হয় | এর পটাশিয়াম হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে|
  • এটি নিয়মিত খেলে আলঝেইমার রোগ হয় না, কারণ এটি শরীরের নার্ভ ঠিক রাখে | বয়সের কারণে স্মৃতিশক্তি কমা হতে রক্ষা করে ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে| তাছাড়া হেলদি নার্ভাস সিস্টেম ও হেলদি ব্রেইনও পাওয়া যায় নিয়মিত পালংশাক খেলে|
  • এতে অনেক ক্যালসিয়াম থাকায় এটি হাঁড় শক্ত রাখতে ও হাঁড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে হাঁড়ের বিভিন্ন রোগ, যেমন: Osteoporosis, Arthritis ইত্যাদি হয় না
  • এর ভিটামিন এ ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ও বলি রেখা পড়তে দেয় না
  • তাছাড়া এতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকায় এটি ইনফেকশন সারাতে ও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
  • গ্যাস্টিক ও আলসার হতে বাঁধা দেয়
  • এতে প্রচুর আয়রন থাকায় এটি রক্ত বৃদ্ধি করে, লাল লোহিতকনিকা বৃদ্ধি করে, রক্তে অক্সিজেন বাড়ায় ও রক্তশূন্যতা দূর করে
  • এতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় ভিটামিন সির অভাব জনিত রোগ দূর করে
  • বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার, যেমন: bladder, prostate, liver ,colon, stomach, skin, breast, ovarian  এবং lung cancer প্রতিরোধ করে ও ক্যান্সারের কোষ ধ্বংশ করে ও ক্যান্সারের কোষ সৃষ্টি হতে বাধা দেয়|
  • এটি শরীরের রোগ প্রতরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরের সব অঙ্গ ও প্রক্রিয়া, যেমন: শ্বাস, হজম, ইত্যাদি প্রক্রিয়া ঠিক রাখে
  • ক্ষতিকর সুর্য রশ্মি, যেমন ইউভি রশ্মি হতে ত্বককে রক্ষা করে, ফলে ত্বকের ক্যান্সার হয় না
  • এতে protein, vitamins, minerals ও phytonutrients থাকায় শিশুদের বেড়ে ওঠায় অনেক ভূমিকা রাখে
  • Insomnia বা ঘুমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে
  • শরীরের যে কোনো জায়গায় tumor হয় না, বা সারাতে সাহায্য করে
  • এর ফাইবার বা আঁশ সারাদিনের ২০% ফাইবারের চাহিদা পূরণ করে, এই ফাইবার বা আঁশ, হজমে সাহায্য করে ও ফ্যাট দূর করে ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, শরীরের ক্ষুধা নিবারণ করে,  ক্ষুধা কম লাগে, ফলে ব্লাড  সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ও হজম প্রক্রিয়া সচল রাখে|
  • এর মিনারেলস খুবই ক্ষারীয়, যা শরীরের pH এর সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে|
  • এটি হতে পারে মাংশের বিকল্প আমিষ|কারণ, সমপরিমান পালংশাক থেকে মাংসের মতই একই পরিমানে আমিষ পাওয়া যায়
  • গর্ভবতী মহিলারা এটি খেলে গর্ভকালীন নানান রকম সমস্যা হতেও রক্ষা পাওয়া যায়
শরীর সুস্থ্য রাখতে, ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই পালংশাকের জুড়ি নেই | তাই একে বলা হয় “ nutritional powerhouse”| তাই, বুঝতেই পারছেন, আমাদের শরীরের জন্য পালংশাকের অনেক উপকারিতা আছে|এর প্রচুর ও নানান রকম ভিটামিন, মিনারেলস, ইত্যাদির জন্য এটি একটি হেলদি খাবার হিসাবে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সবার উপরে রাখা উচিত|
তাই নিয়মিত পালংশাক ও অন্যান্য সবুজ শাকপাতা খেতে হবে|
 মাশরুমও কম ক্যালরি ও অধিক ফাইবার যুক্ত, একটি সবজি, যাতে কোনো ফ্যাট নেই | এতে অনেক ভিটামিন ও মিনারেল আছে | ভিটামিন C, D, B6 ও  B12, এবং অনেক পরিমানে riboflavin, niacin , selenium , calcium, iron, potassium , selenium ও pantothenic acid আছে|  এতে খুব কম শর্করা থাকে, ফলে ডায়বেটিস, কোলেস্টেরল ও হার্টের রোগীরা এটি খেতে পারেন| তাছাড়া এটি ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে
নিচে রেসিপিটি দিচ্ছি:
উপকরণ
পালং শাক – এক গুচ্ছ|
পেয়াজ কুচি—২ টেবিল চামচ
রসুন কুচি – ৩ টি কোষ
গোল মরিচ- ১/২ চা চামচ
সয়াসস—এক টেবিল চামচ
মাশরুম—ক্যানের বাটন মাশরুম — ৪ টি পাতলা করে কাটা
তিল –টোস্ট করা, এক টেবিল চামচ
জলপাই তেল—এক টেবিল চামচ
প্রণালী:
  • পালং শাক পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ভালো ভাবে ধুয়ে নিন|তারপর লম্বা ডাটাগুলো  ফেলে দিয়ে, পাতাগুলো কুচি করে নিন|
  • প্যান গরম করে তাতে তিল দিন| নাড়ুন| তিল ফুটতে শুরু করলে ও হালকা বাদামি রং ধরলে, চুলা থেকে নামান|
  • এবার অন্য একটি প্যানে জলপাই তেল গরম করে, তাতে পেয়াজ কুঁচি দিন| ভাজুন |
  • এক মিনিট পরে রসুন কুচি দিন| ভাজুন|
  • এবার পালংশাক কুচি দিন| ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন| মাঝে মাঝে নাড়ুন|
  • পালংশাকের পানি শুকিয়ে গেলে ও শাক নরম হয়ে গেলে, মাশরুম দিন|
  • এবার গোলমরিচ ও সয়াসস দিন|লবন দিন|
  • নেড়ে চেড়ে লবন চেখে নামান|
এটি ভাত, ফ্রাইড রাইস, এমনকি নুডুলস এর সাথেও পরিবেশন করা যায়|
পালংশাক রান্না করার সময় খুব বেশি রান্না করবেন না, কারণ পালংশাক বেশি রান্না করলে এর ভিটামিন সমূহ নষ্ট হয়ে যায়|
যেহেতু পালংশাক এই শীতের সময়ে সহজলভ্য, তাই এটি অবশ্যই আজকেই রান্না করে দেখবেন|আর আমাকে জানাবেন কেমন লাগলো| আর ভালো লাগলে আপনার পরিচিত সবার সাথে শেয়ার করুন|
এই রান্নায় চাইলে, মাশরুম ও তিল বাদ দিতে পারেন |

No comments:

Post a Comment